নারিকেলের মাকড় আক্রমণ ও তার প্রতিকার

নারিকেলের মাকড় আক্রমণ ও তার প্রতিকার


মাকড় আক্রমনের লক্ষণ


  • মাকড়, আক্রান্ত নারিকেলের বোটার কাছ থেকে খোলের উপর আঁচড়ের মত ফাটা বাদামী দাগ পড়ে






  • এসব ফাটা স্থান দিয়ে আঠালো পদার্থ বের হয়। ফলে কচি ডাবের খোঁসা আক্রান্ত হয়ে বাদামী হয়ে যায়
  • আক্রান্ত নারিকেল আকারে ছোট ও শক্ত হয়ে যায়
  • ২ মাস বয়সের নারিকেল বেশি আক্রান্ত হয় এবং ছয় মাস বয়স পর্যন্ত এরা আক্রান্ত ফল হতে রস চুষে খায়
  • নারিকেলের বয়স ছয় মাস বা তার বেশি হলে অপেক্ষাকৃত কঁচি ফলে চলে যায়
  • তীব্র আক্রমন হলে গাছ নারিকেল শুন্য হয়ে পড়ে। এ সময় খাদ্যের সন্ধানে মাকড় গাছের কচি পাতায় চলে যায়।
  • কাঁদিতে নারিকেলের বয়স দুই মাস হলে মাকড় আক্রমন করে
  • ৩-৪ মাস বয়সের নারিকেলে মাকড় সব চেয়ে বেশী থাকে


আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারিকেলে মাকড়র আক্রমনের ফলাফল


  • বাংলাদেশে নারিকেল উৎপন্ন হয় কৃষকের বাড়ির আঙিনায়
  • উৎপাদনকারী বেশীর ভাগ কৃষকই ভূমিহীন , ক্ষুদ্র বা প্রান্তিক চাষী
  • পৃথিবীতে তেল তৈরীর জন্য নারিকেল উৎপাদন হলেও বাংলাদেশে নারিকেল উৎপাদন হয় ফল ও কঁচি ডাব হিসেবে খাওয়ার জন্য।
  • নারিকেল ছোবড়ার আঁশ থেকে দড়ি, মালা থেকে বোতাম ও নানান ধরণের ব্যবহার যোগ্য দ্রব্য সামগ্রী তৈরী হয়।


ক্ষতির পরিমাণ


  • মাকড়ের আক্রমনে নারিকেলর উৎপাদন কমেছে ১৫-২৫%
  • আকামত্ম গাছে দাগ ওয়ালা ও দাগমুক্ত স্বাভাবিক আকৃতির নারিকেল আকারে ছোট হয়ে থাকে।
  • দাগ বিহীন হলেও ছোট নারিকেলের বাজার মূল্য কম।
  • আক্রান্ত নারিকেল দাগ পড়া হলেও যদি বড় আকারে হয় তা স্বাভাবিক নারিকেলের দামেই বিক্রি করা যায়।
  • দাগ যুক্ত ফাটা ও বিকৃত নারিকেল বিক্রির অনুপযোগী হয়ে থাকে।
  • মাকড় আক্রান্ত নারিকেলের খোঁসা ভাল হয়না বলে তা দিয়ে দড়ি তৈরী করা যায় না
  • আক্রান্ত গাছের ২৫% পর্যন্ত নারিকেল বিক্রির অনুপযোগী হয়ে থাকে
  • দাগমুক্ত ও দাগযুক্ত ছোট আকারের নারিকেল বড় নারিকেলের অর্ধেক মূল্যে বিক্রি হয়
  • এ হিসেবে আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় ৭০-৮০%


মাকড় দমন


  • বেশিরভাগ মাকড়ই একে অপরের শত্রু

  • অনেক কীট-পতঙ্গও মাকড় খেয়ে বাচে। তাই প্রাকৃতিক ভাবেই মাকড় নিয়ন্ত্রন হয়ে থাকে। মাকড় নাশক দিয়েও মাকড় দমণ করা যায়

  • ফলের বোটার বৃতির নিচে বাসা বাঁধে বলে এরা সরাসরি মাকড় নাশকের সংস্পর্শে আসে না আবার প্রাকৃতিক শত্রুও এদের খুজে পায় না। তাই মাকড় দমন বেশ কঠিন

  • নির্বিচারে কীট-নাশক ব্যবহার করলে পোকা মরে ফলে মাকড়ের আক্রমন বৃদ্ধি পায়।


  • প্রথম ধাপ
    ১। আক্রান্ত গাছের ফুল সহ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সকল ফল কেটে আগুনে ঝলসাতে হবে

    ২। অতঃপর গাছের মাথায় কাঁদি সংলগ্ন এলাকায় ওমাইট ১.৫ মিলি বা ভার্টিমেক নামক মাকড়নাশক ১.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশায়ে কঁচি পাতা সহ স্প্রে করতে হবে। ৩। শীতের আগে আক্রান্ত গাছের ফুল সহ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সকল ফল কেটে আগুনে ঝলসাতে হবে
    দ্বিতীয় ধাপ
    ৪। অতঃপর গাছের মাথায় কাঁদি সংলগ্ন এলাকায় ওমাইট ১.৫ মিলি বা ভার্টিমেক নামক মাকড়নাশক ১.৫ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশায়ে কঁচি পাতা সহ স্প্রে করতে হবে।
    তৃতীয় ধাপ
    ৫। প্রথমবার স্প্রে করার পর গাছে ফল আসলে সেই ফলের বয়স ২ মাস হলে দ্বিতীয়বার স্প্রে করতে হবে।
    চতুর্থ ধাপ
    ৬। গাছে সংগ্রহ কারার উপযোগী ডাব/নারিকেল থাকলে তা সংগ্রহ করে আগের নিয়মে আবার স্প্রে করতে হবে
    পঞ্চম ধাপ
    ৭। চতুর্থ ধাপের মত আশে-পাশের তরুন ও ছোট গাছ সহ নির্দিষ্ট গাছগুলোতে শেষবারের মত মাকড়নাশক স্প্রে করতে হবে